পুরুষের জন্য ‘স্বর্ণ’ ব্যবহার করা কী জায়েজ!
পুরুষের জন্য কী আদৌ ‘স্বর্ণ’ ব্যবহার করা জায়েজ! চলুন দেখি এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) কী বলেছেন।
বিখ্যাত সাহাবি আবু মূসা আশ‘আরী (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَحَلَّ لِإِنَاثِ أُمَّتِى الْحَرِيرَ وَالذَّهَبَ وَحَرَّمَهُ عَلَى ذُكُورِهَا
‘আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের নারীদের জন্য রেশম ও স্বর্ণ হালাল করেছেন এবং পুরুষদের জন্য হারাম করেছেন’। (নাসাঈ হা/৫২৬৫, সনদ ছহীহ)।
হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার আমার উম্মতের পুরুষদের ওপর হারাম করা হয়েছে। সামরিক ও বেসামরিক উভয় প্রকারের লোকদের বেলায়ও প্রযোজ্য। (আবু দাউদ,ইবনে মাজা)।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম নারীর জন্য নয়। কেননা আলী ইবনু আবুতালিব (রা.) বলেন, আমাকে রাসূল (সা.) স্বর্ণের আংটি পরতে, রেশমী পোশাক পরতে, রুকু ও সিজদায় কোরআনের আয়াত পরতে এবং হলুদ রং এর পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিযী, হা- ১৩/১৭৩৭)
এর কারণ হচ্ছে মানুষের সৌন্দর্যের জন্য স্বর্ণ হচ্ছে সর্বাধিক মূল্যবান বস্তু। বস্তুটি সৌন্দর্য ও অলংকার হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে। আর এটি পুরুষদের দরকার নেই। অর্থাৎ পুরুষ এমন মানুষ নয় যে, তাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে পরিপূর্ণ হতে হবে বরং তার পুরুষত্বের কারণে নিজেই পরিপূর্ণ একজন মানুষ। তাছাড়া নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষের সৌন্দর্য্য অবলোকন করারও দরকার নেই। কিন্তু নারী এর বিপরীত। নারী অপূর্ণ, তার সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করা দরকার। এ কারণে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার প্রয়োজন দেখা যায়। যাতে করে তার এই সৌন্দর্য অন্য মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য নয় বরং স্বামী স্ত্রীর মাঝে সদ্ভাব সৃষ্টি করার জন্য।
আর এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা নারীর জন্য স্বর্ণ দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হালাল করেছেন। আর পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম করেছেন। আল্লাহ তায়ালা নারীর প্রকৃতির বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন,
‘নারী অলংকারে মণ্ডিত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বির্তককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থিত।’ (সূরা যুখরুফ- ১৮)।
আর এভাবেই শরীয়তে পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার না করার রহস্য সুস্পষ্ট হয়ে গেল। শরীয়তের সীমা রেখার মধ্যে পুরুষের জন্য রৌপ্য ব্যবহার বৈধ রয়েছে। সাহাবি হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর আংটি ছিল রুপার এবং তাতে লাল রংয়ের পাথর বসানো ছিল। (সুনানে তিরমিযী, হা- ১৪/১৭৩৯)।
যে সমস্ত পুরুষ স্বর্ণ ব্যবহারে অভ্যস্ত, তারা নিজেদেরকে নারীর কাতারে শামীল করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) নাফরমানী করে নিজ হাতে বা গলায় জাহান্নামে জ্বলন্ত অঙ্গার পরিধান করছে।
হজরত হুযায়ফা বিন ইয়ামান (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করতে, রেশমী পোষাক পরিধান করতে ও রেশমি বিছানায় বসতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী)।
যে ব্যক্তি পুরুষের রেশম ব্যবহার করাকে হালাল মনে করে অথবা অন্য কোনো হারামকে হালাল মনে করে সে কাফির।
শুধুমাত্র রুগ্নব্যক্তি (ডাক্তারের মতে অনিবার্য হলে) এটা ব্যবহার করতে পারে। আর যুদ্ধ ক্ষেত্রে সৈনিকরাও প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারে। নিছক সখ ও সৌন্দর্যের জন্য পুরুষের পক্ষে রেশম ও স্বর্ণ ব্যবহার করা সর্বসম্মতভাবে হারাম। অনুরুপ যে পোশাকের অধিকাংশ সুতো, অল্পাংশ রেশমি তাও পুরুষের ব্যবহার করা হারাম। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) এক ব্যক্তির হাতে সোনার আংটি দেখে তা টেনে খুলে ফেললেন এবং বললেন, তোমাদের এই ব্যক্তির নিজ হাতে জাহান্নামের আগুন পরার সখ হয়েছে। (মুসলিম)।
উল্লেখ্য যে স্বর্ণ ও রেশমের নকশা এবং এমব্রয়ডারীও পুরুষের জন্য হারাম। তবে শিশুদের স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার করানো সম্পর্কে মদভেদ রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলসহ অধিকাংশ ইমামের মতে পুরুষ ও শিশুদের জন্যও এটা হারাম।
সকল মুসলমানের উদ্দেশ্যে ভাষণের সময় মহানবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাতে দুটো সামগ্রী অর্থাৎ এক হাতে স্বর্ণ ও অপর হাতে রেশমি কাপড় নিয়ে বলেছেন যে, ‘এই দুইটি সামগ্রী তোমাদের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।’ সে হিসেবে পুরুষদের জন্য সর্বাবস্থায় স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। কিছু আলেম ফতোয়া দিয়ে থাকেন যে, একজন পুরুষ মানুষ চার আনা পরিমাণ স্বর্ণের একটি আংটি ব্যবহার করতে পারবে। জানা নেই যে উনারা এই সকল বানোয়াট মাসয়ালা কোথায় থেকে আমদানি করেন।
তাদের যুক্তি হলো, রাস্তা-ঘাটে চলাচলের সময় হটাৎ করেই যখন সে কোনো সমস্যায় পরবে, তখন এই আংটিটি বিক্রি করে সে তার চাহিদা পূরণ করবে। আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিৎ যে, সাহাবী (রা.) গন এই ধরনের আংটি কখনো ব্যবহার করেছেন কী-না। তাদের সময় মানুষ দরিদ্র থাকলেও স্বর্ণটা একটা সাধারণ জিনিস ছিল। অতএব তারা কখনো যদি চারি আনা পরিমাণের স্বর্ণ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আমাদের জন্যও তা ব্যবহার করা জায়েজ। আমার জানা মতে স্বর্ণ নামক সামগ্রী কোনো একজন সাহাবী (রা:) ব্যবহার করেছেন, এই ধরনের কোনো তথ্য হাদিস কর্তৃক বর্ণিত হয়নি।
বাংলায় যাকে বলে রেশম, ইংরেজিতে তাকেই বলে সিল্ক। তার পরও কিছু মানুষ আছে যারা মনে করেন যে, সিল্ক হলো আলাদা জিনিস আর রেশম হলো আলাদা। রেশম হলো পোকার গুটি আর সিল্ক হলো অন্য কিছু। বিশেষ করে যখন ঈদের সময় আসে তখন পুরুষ মানুষের কাছে সিল্কয়ের পাঞ্জাবীর একটা বিশেষ কদর দেখা যায়। সাবধান! মহানবী সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয় সম্বন্ধে সরা-সরি হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, তা ব্যবহার করার কোনো ইচ্ছা বা স্পর্ধা দেখাবেন না। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লহ রাব্বুল আলামিনই ভালো জানেন।
টেক আসমাউল ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url